10>।। গৃহস্থ বাড়িতে ফলহরিণী কালীপুজো করার - সহজ পদ্ধতি ।।
( সংগ্রহীত)
ফলহারিণী কালীপুজো সকল গৃহস্থ বাড়িতেই করা যায়। এই পূজা বড় আকারে যেমন করা যায়, আবার সংক্ষিপ্তভাবে অর্থাৎ ছোট আকারেও করা যায়।
সংক্ষিপ্তভাবে পঞ্চোপচারে - ফলহারিণী কালীপুজো করার পদ্ধতি::---
★★(১) ভগবান শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণপরমহংস দেব তাঁর পত্নী শ্রীশ্রী"মা সারদা দেবী"কে এই ফলোহারিনী কালীপুজোর দিন রাতে - ষোড়শী রূপে পূজা করেছিলেন।
তাই *সারদামায়ের ছবিতে অথবা দক্ষিণা কালীমায়ের ছবিতে* - আপনারা এই ফলোহারিণী কালীপুজো করতে পারবেন।
★★(২)* অমাবস্যা তিথি শুরু হওয়ার পর ফলহারিণী কালী পূজা শুরু করতে হয়। তাই অমাবস্যা তিথি শুরু হওয়ার ঘন্টাখানেক আগে - স্নান করে, শুদ্ধ পরিষ্কার বস্ত্র পরে, ঠাকুর ঘরে গিয়ে - পূজা শুরু করার আগে পূজার সব উপকরণ সাজিয়ে নিতে হবে।
★★(৩)* পূজা শুরু করার আগে - সারদা মায়ের ফটো অথবা কালীমায়ের ফটো - পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে, একটি মালা পরিয়ে, ফুল দিয়ে ভালো করে সাজিয়ে দিতে হবে।
★★(৪) পূজার উপকরণ* ->
তিন রকম বা পাঁচ রকমের গোটা ফল, মিষ্টি, লাল সাদা বিভিন্ন রকের ফুল, ৫ টা বেলপাতা, ৩ টা তুলসী পাতা, ৫ টা দূর্বা, অল্প আতপ চাল, সাদা চন্দন, লাল চন্দন, দূর্বা, অল্প গঙ্গাজল, ধূপকাঠি, ধূপদানি ১টা, একটা প্রদীপ, একটা আসন, একটা ঘন্টা, একটা পুষ্পপত্র, তিনটি থালা, ৪টা ছোট বাটি, একটি গ্লাস, অল্প ঘী ও একটি দেশলাই।
★★(৫)* একটি পুষ্পপত্রের মধ্যে ছোট-বড় বিভিন্ন রকমের ফুল, বেলপাতা, দূর্বা, আর চারটি ছোট বাটির মধ্যে - সাদা চন্দন, লাল চন্দন, আতপ চাল, গঙ্গাজল সাজিয়ে নেবেন। আর আরেকটি থালার মধ্যে ধুপকাঠি ও ধূপদানি রেখে দেবেন এবং ঘি দিয়ে প্রদীপটা জ্বালিয়ে দেবেন।
★★পূজা পদ্ধতি* :::--
●(১) উপরেউক্ত দ্রব্যগুলো সব ভালোভাবে গুছিয়ে নেওয়ার পর - মালা ও ফুল দিয়ে সাজানো শ্রীমাসারদা দেবী বা কালী মায়ের ছবির নিচে অর্থাৎ পায়ে একটি অর্ঘ্য দিয়ে - ছবির সামনে অর্থাৎ ছবির থেকে দু-হাত দূরে আসন পেতে বসতে হবে। পূজা শুরু করার আগে তিনবার শঙ্খ বাজিয়ে নিতে হবে।
●(২) আসনে বসে গঙ্গা জলে হাত ধুয়ে - দুটি ধুপকাঠি ধরিয়ে দিতে হবে এবং মাকে প্রণাম করে - গুরুদেওয়া মন্ত্র ১০৮ বার জপ করতে হবে। জপের পর পূজা শুরু করতে হবে।
★★★পঞ্চোপচারে পূজা:::---
●(১) গন্ধ::- পুষ্পপত্রে রাখা ফুল গুলোর মধ্যে থেকে একটি ছোট সাদা ফুল নিয়ে তার মধ্যে সাদা চন্দন মাখিয়ে -
★"ওঁ ঐঁ হ্রীং এস গন্ধ ফলহারিণী কালীকা দেবৈ নমঃ"-
এই মন্ত্র বলে সামনে রাখা মায়ের ছবিতে অর্থাৎ মায়ের চরণে দিতে হবে।
●(২) পুষ্প::-- পুষ্পপত্র থেকে পুষ্প অর্থাৎ বিভিন্ন রকম ফুল নিয়ে - লাল ও সাদা চন্দন মাখিয়ে ->
★"ওঁ ঐঁ হ্রীং এষ সচন্দন পুস্প ফলোহারিনী কালীকা দেবৈ নমঃ"
- এই মন্ত্র বলে মায়ের চরণে দিতে হবে।
●(৩) বিল্বপত্র::--- পুষ্পপত্র থেকে বেল পাতা নিয়ে সেই বেলপাতাতে - সাদা ও লাল চন্দন মাখিয়ে ->
★"ওঁ ঐঁ হ্রীং এষ সচন্দন বিল্বপত্র ফলহারিনী কালীকা দেবৈ নমঃ"-
এই মন্ত্র বলে মায়ের চরণে দিতে হবে।
●(৪) ধুপ::--- তিনটি ধূপকাঠি একসাথে জ্বালিয়ে - ডান হাতে ধূপকাঠি নিয়ে এবং বাম হাতে ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে ->
★"ওঁ ঐঁ হ্রীং এষ ধুপ ফলাহারিণী কালীকা দেবৈ নমঃ"-
এই মন্ত্র বলতে বলতে তারপর ধূপদানিতে রেখে দিতে হবে।
●(৫) দীপ::-- দীপ অর্থাৎ জ্বলন্ত প্রদীপ ডান হাতে নিয়ে, বাম হাতে ঘন্টা বাজাতে বাজাতে ->
★"ওঁ ঐঁ হ্রীং এষ দীপ ফলোহারিনী কালীকা দেবৈ নমঃ"-
এই মন্ত্র বলে মায়ের সামনে ঘুরিয়ে রেখে দিতে হবে।
●(৬) নৈবেদ্য:::--- একটি থালাতে তিন রকম বা পাঁচ রকম ★গোটা ফল★( এই পুজোতে গোটা ফল অবশ্যই দিতে হয়), আরেকটি থালাতে বিভিন্ন রকম মিষ্টি ও এক গ্লাস জল মায়ের ছবির সামনে সাজিয়ে দিতে হবে। তারপর সেই নৈবেদ্যের উপর অর্থাৎ ফল, মিষ্টি ও জলের গ্লাসের মধ্যে তুলসী পাতা দিতে হবে। এরপর পুষ্পপত্র থেকে হাতে ছোট সাদা ফুল নিয়ে -
★"ওঁ ঐঁ হ্রীং এষ সোপকরণ ফলম্ মিষ্টাদি নৈবেদম্ ফলহারিনী কালিকা দেবৈ নিবেদয়ামি"-
এই মন্ত্র বলে ছোট সাদা ফুল নিয়ে গঙ্গা জলে স্পর্শ করে - ফল ও মিষ্টির উপর দিতে হবে।
তারপর হাতজোড় করে সেই - ফল, মিষ্টি - নৈবেদ্য মাকে গ্রহণ করার জন্য প্রার্থনা করতে হবে এবং যথাসম্ভব জপ করতে হবে।
●(৭) পুষ্পাঞ্জলি:::-- পুষ্পপত্র থেকে বেলপাতা, দূর্বা, বিভিন্ন রকম ফুল হাতে নিয়ে - তার মধ্যে চন্দন মাখিয়ে - মায়ের দিকে তাকিয়ে হাতজোড় করে ->
★"ওঁ ঐঁ হ্রীং এষ সচন্দন পুষ্প বিল্ব পত্রাঞ্জলি ফলহারিণী কালিকা দেবৈ বৌষট" -
এই মন্ত্র বলে মায়ের চরণে দিতে হবে। এইভাবে মন্ত্র বলে - একবার অথবা তিনবার পুষ্পাঞ্জলি দিতে হবে।
●(৮) ক্ষমা প্রার্থনা:::-- জেনে বা অজান্তে এই পূজার মধ্যে বা পূজা করতে গিয়ে - যদি কোনরকম ভুলত্রুটি হয়ে থাকে - সেই কারণে হাতজোড় করে -
★"শরণাগত দিনার্ত, পরিত্রাণ পরায়ণে।
সর্বসার্তি হরে দেবী, নারায়ণি নমস্তুতে।।"
- এই মন্ত্র বলে মায়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়।
●(৯) কর্মফল সমর্পণ:::-- ডান হাতে একটু গঙ্গা জল নিয়ে - মায়ের দিকে তাকিয়ে বলতে হবে ->
★"ওঁ ঐঁ হ্রীং ফলহারিণী কালিকা দেবৈ স্বাহা - এতৎ সর্বম কর্মফলং ফলহারিনী কালীকা দেবৈ অর্প নমস্তু"-
এই মন্ত্র বলে মায়ের ছবির সামনে মেঝেতে ডান হাত থেকে গঙ্গা জল ফেলতে হবে।
●(১০) প্রণাম মন্ত্র::--- সবশেষে হাতজোড় করে -
★"ওম্ সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যে, শিবে সর্বার্থসাধিকে।
শরণ্যে ত্রম্বকে গৌরী, নারায়নী নমস্তুতে।।"
- এই মন্ত্র বলার পর আসন থেকে উঠে মাকে প্রণাম করতে হবে।। (সমাপ্ত)
============-
ফলহারিণী কালী পুজোর দিনক্ষণ::--
দেবী মা কালীর বিভিন্ন রূপের পুজো আরাধনা সর্বজনবিদিত।
জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যা তিথিতে ফলহারিণী কালী পুজো হয়। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক পৌরাণিক গল্প।
(ফলহারিণী কালী পুজো ২০২৩-র নির্ঘণ্ট
১৮ মে (বাংলায় ৩ জ্যৈষ্ঠ), বৃহস্পতিবার, এবারের ফলহারিণী কালী পুজোর দিন পড়েছিল। ১৮ মে, রা ৯/১৩/৩৬ মিনিট থেকে ১৯ মে, রা ৮/৪৩/২৩ মিনিট পর্যন্ত থাকবে অমাবস্যা তিথি।
কেন পালন হয় ফলহারিণী কালীপুজো?
মা কালী জীবের কর্মফল অনুসারে ফল প্রদান করছেন। তিনিই নিজের মধ্যে সমস্ত কর্মফলকে ধারণ করেন। এই মাতৃরূপা মহাশক্তি প্রসন্না হলে জীবের দুঃখ ও দুর্দশা থেকে মুক্তি মেলে। সেই সঙ্গে শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ হয়।
শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণপরমহংস দেব ফলহারিণী কালী পুজোর দিনই স্ত্রী সারদা দেবীকে পুজো করেছিলেন জগৎ কল্যাণের জন্য। এদিন শ্রীমা সারদাকে ষোড়শীরূপে পুজো করেছিলেন বলে আজও রামকৃষ্ণমঠ ও আশ্রমে এই পুজো 'ষোড়শী' পুজো নামে পরিচিত।
"" সংকলিত""
<----আদ্যনাথ রায় চৌধুরী----->
===========================
No comments:
Post a Comment